হেলপ কক্সবাজার এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি দিবসে র‍্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার এর আয়োজনে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “ কোভিড-১৯ পরবর্তী অন্তর্ভূক্তিমূলক বিশ্ব গড়তে প্রয়োজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ’।

এ উপলক্ষে শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) সকালে জালিয়াপালং এ র‍্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ডিজাবিলিটি লার্নিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের সভাপতি শামশুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জালিয়াপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের বলেন, প্রতিবন্ধীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সম্পদে পরিণত হয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, হেলপ কক্সবাজার এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম, জালিয়াপালং ১নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মোঃ হোসাইন সিকদার, পাইন্যাশিয়া কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ কালু, হেলপ কক্সবাজার এর প্রজেক্ট ম্যানেজার লরেন্স দাজেল, মনিটরিং এন্ড লাইভলিহুড অফিসার মধু বড়ুয়া, ফিল্ড অফিসার, সাইফুল ইসলাম, ফাতেমা বেগম।

বক্তারা বলেন, সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা মানব বৈচিত্রেরই অংশ। তাই, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তাদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি। সমাজের অবিচ্ছেদ্য এ অংশকে সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তবেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।”

প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সবাইকে এক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদেরকেও মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

উক্ত অনুষ্টানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং জালিয়াপালং ইউনিয়নের শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূলস্রোত ধারায় আনতে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি বিষয়ক মতবিনিময় সভা

আবদুল্লাহ আল আজিজ :

বক্তব্য রাখছেন হেলপ কক্সবাজার এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম

সমাজে পিছিয়ে পড়া ও নানান বৈষম্যের শিকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং সম্ভাব্য ইউপি সদস্যদের নিয়ে ভিন্নধর্মী এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে উখিয়ার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার।

গত ৩০ অক্টোবর (শনিবার) ডিজাবিলিটি লিডারশীপ লার্নিং সেন্টারে জালিয়াপালং ১নং ওয়ার্ড থেকে ইউপি পদে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের সাথে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূলস্রোত ধারায় আনয়নে প্রার্থীদের পরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত মতবিনিময় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্যে হেলপ কক্সবাজার এর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ম্যানেজার সাকিল আহমেদ হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মপরিকল্পনার বিষদ আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, জালিয়াপালং ইউনিয়নে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ১২শ ৫০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নাম জরিপের মাধ্যমে উঠে আসে। যার মধ্যে ১৯৭ জনকে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়ক যন্ত্র প্রদান ও তাদের আয়মূলক উৎপাদনের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে বিভিন্ন উপকরণের প্রদানের কথা উল্লেখ করেন এবং বাকী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক যন্ত্র, উপকরণ দেওয়ার প্রচেষ্টা চলমান বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, যারা প্রতিবন্ধিতা এবং অটিজমে ভুগছেন তাদের ভালোভাবে লেখাপড়া করে যত্ন নিয়ে ট্রেনিং দিয়ে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা যায়। তারা যেন মূলস্রোতের সঙ্গে মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে থাকতে পারে সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা অনেক।

তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আলাদাভাবে দেখতে হবে। তাদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যদি কেউ অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে ও প্রতিবছর ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য বাজেট বরাদ্দ এবং ইউনিয়ন স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জনপ্রতিনিধিদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

এসময় উপস্থিত সদস্যরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এ সমাজেরই অংশ। তাদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নের মূল স্রোতে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। দক্ষতা উন্নয়ন করে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তাদের জীবন-জীবিকার পথ সম্প্রসারিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্মানের সঙ্গে সমাজে বসবাসের সুযোগ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সবাইকে সমন্বিতভাবে চেষ্টা চালাতে হবে। তাহলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।

তাই আমাদের পরিষদের পক্ষ থেকে যা কিছু করা প্রয়োজন, আমরা সেটা করতে চেষ্টা করব। সরকারের যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে, আমরা তাদের দেওয়ার চেষ্টা করব বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন তারা।

হেলপ কক্সবাজার এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, এখানে যেটা সবচাইতে বড় প্রয়োজন সেটা হলো আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা ছোটবেলায় পড়েছি কানাকে কানা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না। এই শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই শিশুদের দিতে হবে। সবাই মানুষ সবাই একসঙ্গে চলবে এটাই হচ্ছে বড় কথা। আমরা চাই দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদেরও গুরুত্ব দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক মানুষের ভেতরেই অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে। প্রতিবন্ধীরাও তার বাইরে নয়। তাদের ভেতরের সেই শক্তিকে বের করে আনতে হবে। তাদের জন্য কর্মপরিবেশ তৈরি করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বর্তমান সরকার অত্যন্ত প্রতিবন্ধীবান্ধব। বিশেষ করে যারা প্রতিবন্ধিতার শিকার, তাদের জনগোষ্ঠীর মূল স্রোতে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে সমাজে নিজের মতো করে বাঁচতে পারে- এটাই আমাদের চাওয়া। এই বিশ্বাস আমাদের আছে এবং এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাই। সরকার যথেষ্ট কাজ করছে। তার সঙ্গে সামাজিক উদ্যোগগুলো যুক্ত হয়েছে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমরা এগিয়ে যাব। সবার সমন্বিত উদ্যোগে প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজের পরিবেশ ও দক্ষতা তৈরি হবে।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো কাজের জন্য সরকারের যেমন প্রকল্প থাকে, তেমনি উন্নয়ন সহযোগীদেরও প্রকল্প থাকে। প্রকল্পের মাধ্যমেই কাজ হয়। আমাদের মূল কাজটা ছিল স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে যেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ থাকে। এছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, তা সমাজে প্রচার করতে হবে। স্থানীয়ভাবে সমাজের কল্যাণ করার জন্য বাজেট রয়েছে। স্থানীয় সরকারের এ বাজেট থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখতে হবে। বাজেটের অর্থ তাদের মধ্যে সঠিকভাবে বণ্টন করা হলে তাদের সত্যিকার কল্যাণ হবে এবং তাহলে তারা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসতে পারবে। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

উখিয়ায় মাদক অপরাধ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত

আবদুল্লাহ আল আজিজ :

উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজারের সহযোগিতায় পূর্ব ডিগলিয়াপালং ইসলামি ঐক্য পরিষদের আয়োজনে মাদক অপরাধ প্রতিরোধে সচেতনতা মূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২৮ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পূর্ব ডিগলিয়াপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হলরুমে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ করিমের সভাপতিত্বে এ সচেতনতা মূলক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাইপালং মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট এটিএম রশিদ।

পূর্ব ডিগলিয়াপালং ইসলামি ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোঃ রিদুয়ানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হেলপ কক্সবাজার এর মনিটরিং এন্ড ইভ্যালুয়েশন অফিসার মধু বড়ুয়া, ফিল্ড অফিসার সাইফুল ইসলাম, তাজনুভা রিয়া সানি, মোঃ সেলিম, অত্র এলাকার আলী হোসেন।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, মাদকাসক্তরা শুধু নিজেদের মেধা ও জীবনীশক্তিই ধ্বংস করছে না, তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত করছে নানাভাবে। যেসব পরিবারের সদস্য নেশাগ্রস্ত হয়েছে, সেসব পরিবারের দুর্দশা অন্তহীন। জীবনবিধ্বংসী এ নেশার কবলে পড়ে অসংখ্য তরুণের সম্ভাবনাময় জীবন নিঃশেষিত হচ্ছে। মাদকাসক্তি আসলে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির বিবেক-বুদ্ধি, বিচারক্ষমতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, আদর্শ সবকিছুকে খেয়ে ফেলে।

যেহেতু মাদকাসক্তি একটি জঘন্য সামাজিক ব্যাধি, তাই জনগণের সামাজিক আন্দোলন, গণসচেতনতা ও সক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমে এর প্রতিকার করা সম্ভব। যার যার ঘরে পিতা-মাতা থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, পাড়া, মহল্লা বা এলাকায় মাদকদ্রব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ঘৃণা প্রকাশের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে নিয়মিত সভা,উঠান বৈঠক আয়োজন করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় বিধিবিধান-সম্পর্কিত শিক্ষামূলক ক্লাস নিতে হবে। মাদকদ্রব্য চোরাচালান, ব্যবহার, বিক্রয় প্রভৃতি বিষয়ে প্রচলিত আইনের বাস্তব প্রয়োগ ও কঠোর বিধান কার্যকর নিশ্চিত করতে হবে।

মাদক নিরাময়ে চাই পরিবারের আন্তরিকতা ও পারস্পরিক ভালোবাসা। ধর্মভীরু পরিবারের পিতা-মাতাই সন্তানকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে পারেন। তাই এলাকার সুনাম রক্ষার্থে সবাইকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

পরে উপস্থিত সবাই মাদক বিরোধী শপথ পাঠ করেন এবং মাদক প্রতিরোধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

কন্যাশিশুর বিকাশে পরিবার থেকেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে

আবদুল্লাহ আল আজিজ •

কক্সবাজারের উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার এর উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় “ডিজিটাল প্রজন্ম, আমাদের প্রজন্ম” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালিত হয়েছে।

এ উপলক্ষে ১১ অক্টোবর (সোমবার) হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের অফিস হলরুমে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত আলোচনা সভায় হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহবুব কাউসারের সঞ্চালনায় কোরআন তেলাওয়াত করেন সংগঠনের এডমিন মোঃ রিদুয়ান।

সংগঠনের উপদেষ্টা সানা উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন হেলপ কক্সবাজার এর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ম্যানেজার শাকিল আহমদ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, হেলপ কক্সবাজার এর সিনিয়র অপারেশন এন্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজার কেএম মহসিনুজ্জামান, প্রজেক্ট ম্যানেজার ইকবাল হোসাইন, মনিটরিং ইভ্যালুয়েশন এন্ড লাইভলিহুড অফিসার মধু বড়ুয়া, ফিল্ড অফিসার তাজনুভা রিয়া সানি, সাইফুল ইসলাম, হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মোঃ হোসাইন, অনুর্ধ্ব-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের তারকা খেলোয়াড় সাহেদা আক্তার রিফা প্রমুখ।

কন্যা শিশুর সুরক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, আজকের কন্যা শিশু আগামী দিনের নারী এবং মা। তাই কন্যা শিশুদের সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কন্যারা এখনও কিছু কিছু জায়গায় পিছিয়ে আছে। তাই এই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আমরা সবাইকে সচেতন করে তুলতে চাই। কন্যা শিশু শুধু কন্যা নয়, সে এক সময় মা হবে। সেই মা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এগিয়ে নেবে। তাই কন্যাদের যত্ন নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যত্ন নেওয়া হয়। তিনি বলেন, কন্যা শিশুদের নির্যাতন বন্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা সানা উল্লাহ বলেন, কন্যা শিশুদের প্রথম বৈষম্য শুরু হয় পরিবার থেকে। তাদের অবহেলা করা হলেও বৃদ্ধ বয়সে সেই কন্যাদেরই মা-বাবার বেশি সেবা করতে দেখা যায়।

তিনি বলেন, এখন সবক্ষেত্রেই এগিয়ে আমাদের কন্যারা। এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্ট তার বড় প্রমাণ। খেলাধুলায়ও এখন কন্যারা অনেক ভালো করছে। ক্রিকেট, ফুটবলে তাদের নাম ছড়াচ্ছে। তার মধ্যে আমাদের গর্ব অনুর্ধ্ব ১৬ দলের তারকা খেলোয়াড় রিফা অন্যতম।

তিনি আরও বলেন, মেয়েরা যতো এগিয়ে যাবে, শিক্ষিত হবে সমাজ ততো এগিয়ে যাবে। তাই কন্যা শিশুদের সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহবুব কাউসার বলেন, যেকোনো কল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য নারী-পুরুষের অবদান অনস্বীকার্য। শুধুমাত্র পুরুষরাই সব সৃষ্টির সাথে জড়িত নয়, নারীদের সুযোগ দিলে তারাও সবকিছু জয় করতে পারে। তারাও পুরুষের মতো সমাজকে আলোকিত করতে পারে। সেজন্য সব শিশুদেরই সমভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার দিতে হবে। বর্তমান সময়ে পরিবার ছাড়াও সামাজিকভাবে অনেক নারী নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে।

বাল্যবিবাহ নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানতম অন্তরায় এবং আমাদের সমাজ কন্যা শিশুদেরকে বোঝা মনে করে। কন্যা শিশুদের পড়াশোনার পেছনে টাকা খরচ করতে চায় না। তারা মনে করে বিয়ে দিতে পারলে বোঝা দূর হয়ে গেল। তবে সময় অনেক বদলেছে। কন্যা শিশুরা এখন আর বোঝা নয়। বরং কন্যা শিশুরা হল সর্বোত্তম বিনিয়োগ ও সমাজের আলোকবর্তিকা।

হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের নারী এডমিন ফাতেমা তানজিন তার বক্তব্যে বলেন, লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই বাবা মায়ের বেশি যত্ন নেয়। আসলে কন্যা শিশুদের সুশিক্ষিত করার জন্য যদি ভালো বিনিয়োগ করা যায় তবে সেই একদিন বড় হয়ে আদর্শ ও মহিয়ষী মায়ে পরিণত হয়। গাছকে যেমন ভালো পরিচর্যা করলে সে গাছ বড় হয়ে ফুল, ফল, কাঠ, ছায়া ও নির্মল পরিবেশ উপহার দেয়, ঠিক তেমনিভাবে একটি কন্যা শিশুর পেছনে বিনিয়োগ করলে পরিণত বয়সে সে একজন আলোকিত মায়ে পরিণত হয় এবং সে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নানাভাবে আলোকিত করে।

হেলপ কক্সবাজার এর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ম্যানেজার শাকিল আহমদ বলেন, কন্যা শিশু ও নারীকে অবজ্ঞা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের মধ্যে রেখে কখনোই একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে উঠতে পারে না। এই বাস্তবতায়, নারী ও কন্যা শিশুর শিক্ষার বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। সেটি শুরু করতে হবে কন্যা শিশুর জন্য সর্বোচ্চ বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে। পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে তাদের জন্য সমসুযোগ ও সমঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। আর এই মানবসম্পদ গড়ার প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে কন্যা শিশুর জন্মলগ্ন থেকেই। মনে রাখতে হবে, আজকের কন্যা শিশু আগামী দিনের একজন সুশিক্ষিত মহিয়সী নারী ও আদর্শ মা এবং সেই আলোকবর্তিকা হিসেবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করবে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে জাতিসংঘ কন্যা শিশু দিবসের ঘোষণা দেয়। ২০১২ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৪ সালে প্রথম শিশু আইন প্রণয়ন করেন। এর ১৫ বছর পরে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ঘোষণা দেয়। এর পরের বছর বাংলাদেশ সেই সনদে সই করে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন-জীবিকায় ‘হেলপ কক্সবাজার’ এর প্রচেষ্টা!

কক্সবাজার জার্নাল রিপোর্ট •

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন সাধনের জন্য হেলপ কক্সবাজার নিরলসভাবে কাজ করছে।

অস্ট্রেলিয়ান এইডের অর্থায়নে ব্রাকের সহযোগিতার জালিয়াপালং ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরির লক্ষে কাজ করছে উখিয়ার এই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি।

প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি উপকারভোগীরা কর্মসংস্থানের জন্য ছাগল ও মুরগী নিচ্ছেন!

তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন ও মানসিক বিকাশ তথা সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে হতদরিদ্র ৩০টি পরিবারের মাঝে জীবন ও জীবিকার জন্য সেলাই কাজ, মুরগী ও ছাগল পালনের কাজ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যা শারীরিকভাবে অক্ষম, পক্ষঘাতগ্রস্ত, পঙ্গু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

নতুন সেলাই মেশিন পেয়ে খুশিতে আত্মহারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শিউলী

অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক সেলাই মেশিন ও কাপড় পেয়ে স্বাবলম্বীর পথে শিউলি আক্তার। অথচ অভাবের সংসার এবং নানান বৈষম্য, দারিদ্রতা নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। হেলপ কক্সবাজারকে পাশে পেয়ে নিজের জড়তা কাটিয়ে এক পায়ে মেশিন চালিয়ে তৈরি করছেন কাপড়। যা বিক্রি করে আয় করছেন এবং অভাবের সংসারে সহায়ক হয়েছেন।

অন্যদিকে, আবদুল হাফিজ একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। চোখে কিছু না দেখলেও সে হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক মুরগী ও সহায়ক উপকরণ পেয়ে লাভবান হয়েছেন। ডিম ওবাচ্চা থেকে মুরগী বড় করে বিক্রি পূণরায় মুরগী কিনেছেন এবং তা পরিচর্যা করছেন। এখন আসতে আসতে বাড়ছে তার মুরগীর সংখ্যা বড় হচ্ছে তার ছোট খামার। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে তিনিও অবদান রাখছেন।

বয়োবৃদ্ধ মকবুল আহমেদ। যিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। একসময় সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু একদিন কাজ করতে গিয়ে বিল্ডিং এর ছাদ থেকে পড়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। পরবর্তীতে হেলপ কক্সবাজারের জরিপে নাম উঠে আসে তার। পেয়েছেন তার পছন্দনুযায়ী ছাগল পালন।

তিনি জানান, হেলপ কক্সবাজারের সহযোগিতায় পাওয়া ছাগল পালন করছি। ছাগল বাচ্চা দিবে খুব দ্রুত। বাচ্চা হলে তা পরিচর্যা করে বড় করবো এবং ছাগল বিক্রি করে লাভের টাকাসহ পূণরায় আরও বেশী ছাগল কিনে খামার করবো।

এমনই লাইভলিহুড প্রকল্পের আওতায় সহায়তা পেয়েছেন আরও ২৭টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবার। যারা নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন। সফল হতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেমের জানান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে হেলপ কক্সবাজারের বিভিন্ন কার্যক্রম তাদের মাঝে আশার আলো দেখাচ্ছে। এ সংস্থা জালিয়াপালংয়ের পাইন্যাশিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধীদের মাঝে এ আশাবাদ প্রতিষ্ঠা করছে যে তারা কোনমতেই সমাজের বোঝা নয়- বরং উপযুক্ত সুবিধা এবং সুযোগ পেলে তারা ও সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারে তাদের সক্ষমতা এবং একইসাথে দেশকে পারে এগিয়ে নিতে। “হেলপ কক্সবাজার সংস্থা”র একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে শুধু প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন নয়, বরং তারা প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকদের জীবনমান উন্নয়নে এবং একইসাথে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেও কাজ করছে। এটি একইসাথে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী কিন্তু খুবই কার্যকরী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

তিনি বলেন, সাধারণত যাঁরা শারীরিকভাবে একটু অক্ষম, তাঁদের নিয়ে আমরা তেমন একটা চিন্তা করি না। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো আমরা অনেক সময় খেয়াল করি না। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও সমাজে সবার মতো সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা স্বাভাবিক মানুষের মতো অথবা অনেক সময় স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বেশি দক্ষ হয়ে থাকেন। তাঁদের যথাযথ সুযোগ তৈরি করে দিলে তাঁরা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারেন।

প্রতিবন্ধীদের সাথে কথা বলছেন হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক

সেজন্য সবার আগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবন্ধীদের জন্য নেওয়া সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের ওপর আরোপিত বাঁধা, কুসংস্কার ও নেতিবাচক ধ্যানধারণা দূরীকরণে আমরা সচেষ্ট। তাদের ক্ষমতায়নে সরকার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসাসহ নানা ধরনের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। মানবসম্পদ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের মেধা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের উন্নয়নের মূলধারায় আনতে আমরা সচেষ্ট। আর তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থান অত্যন্ত জরুরি। কারণ, একটি পরিবারে যখন একজন প্রতিবন্ধী জন্ম নেয়, তখন সেই পরিবার ধরেই নেয় যে সে পরিবারের জন্য একটি বোঝা। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে আমাদের আর পরিবারের বোঝা হিসেবে বেঁচে থাকতে হবে না। তাদের মূলস্রোতধারায় আনতে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধী বলে এই সমাজে কেউ নিজেকে আর অসহায় ভাবতে পারবে না। একজন অটিজম আক্রান্ত শিশুর মা-বাবা তার সন্তানের জন্য মুখ লুকাবে না। প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থান ঘটবে।’

‘বাংলাদেশ বর্তমানে গোটা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। দেশের সব ক্ষেত্রেই এখন সফলতা দৃশ্যমান। এই উন্নয়নের জোয়ারে দেশের এক শ্রেণির মানুষ অবহেলিত থাকবে, পেছনে পড়ে থাকবে, তা হতে পারে না। প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মহীনতা দেশের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ জন্য আমরা জালিয়াপালং ইউনিয়নের কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।

হেলপ কক্সবাজার এর সহায়তায় মাছ চাষে স্বপ্ন বুনছেন পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদ!

নিজস্ব প্রতিবেদক •

কক্সবাজারের উখিয়ার হাঙ্গরঘোনা গ্রামে মাছ চাষ করে দারিদ্র্যমুক্তি ও নিজেদের সাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখছেন পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্যরা।

স্থানীয় যুব ক্লাবকে স্বাবলম্বী ও শক্তিশালীকরণের লক্ষে উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজারের সহযোগিতায় মাছ চাষের একটি প্রকল্প দেওয়া হয় পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদ সদস্যদের।

তারই ধারাবাহিকতায় তিন মাস আগে থেকে এক কানি জায়গার পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক তাদেরকে বিভিন্ন জাতের পোনা এবং মাছের খাবার সরবরাহ করা হয়। এতে তারা পুকুরটি সংস্কার করে মাছ ছাড়েন এবং সঠিকভাবে মাছের খাবার দেন। নিয়মিত পরিচর্যার ফলে অল্প সময়ে মাছ বড় হতে শুরু করেছে এবং মাছ অপুষ্টিতে বা রোগাক্রান্ত হয়নি।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন তাদের মৎস্য খামার পরিদর্শনে যান হেলপ কক্সবাজার এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম। এসময় তারা পুকুরে মাছের খাবার দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং পুকুরে মাছের খাবার দিতেই রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, পাঙাশ, টেংড়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ খাবার খেতে ছুটে আসে। পরে জাল মেরে দেখা যায়, মাছের সাইজ খুব দ্রুত বড় হচ্ছে এবং আর মাসদেড়েক পরিচর্যা শেষে বাজারে বিক্রি করা যাবে। এতে ভালো লাভবান হবে বলে আশাবাদী তারা।

পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুবেল বড়ুয়া বলেন, হেলপ কক্সবাজার এর সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ এবং মাছ চাষের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংগঠনের সদস্যরাও খুব খুশি এবং উদ্যোগী হয়েছে। তাই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত কোন রকমের সমস্যা দেখা দেয়নি এমনকি এ পর্যন্ত একটি মাছও মারা যায়নি। মাছের বৃদ্ধিও ঠিক আছে। আশা করছি মাছের বয়স সাড়ে তিন থেকে চার মাস হলে বিক্রি শুরু করব এবং একটু পরিশ্রম করে মাছ চাষ করতে পারলে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব বলে জানান তিনি।

পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা বলেন, হেলপ কক্সবাজার’র মাধ্যমে মাছ চাষের প্রকল্প পেয়ে আমাদের সংগঠনের সদস্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। উন্নত জীবনের স্বপ্ন এখন তাদের চোখে। উৎপাদনমুখী কাজের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা এখন আর বোঝা নয়, সম্পদ।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, মাছ চাষে নিজেদের মেধা, অভিজ্ঞতা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে মাছ বিক্রি করে প্রকল্প আরও বৃদ্ধি করা হবে এবং লাভের অংশ থেকে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করবো এবং অসহায়দের পাশে দাঁড়াবো।

পরিদর্শন শেষে হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় আমরা একটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন সহ ৪টি স্থানীয় সংগঠনকে প্রশিক্ষণ শেষে সহযোগিতার মাধ্যমে উপার্জনের পথ তৈরি করেছি। উক্ত প্রকল্পে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, হতদরিদ্র ও এতিম পরিবারের সন্তান এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তারা নিজেদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারবে এবং এলাকার উন্নয়নে নিজেরাই এগিয়ে আসতে পারবে।

এসময় তিনি কাজের অগ্রগতি, স্থায়ীত্বশীলতা, ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ও সংগঠনের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেন।

পরিশেষে পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান এইড, ব্র‍্যাক এবং হেলপ কক্সবাজার এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ান এইডের অর্থায়নে ব্র‍্যাকের কারিগরি সহযোগিতায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য মানবিক সহায়তা প্রকল্প জালিয়াপালং ও রাজাপালং ইউনিয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রকল্পসমূহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি, স্থানীয়করণ, নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার মাধ্যমে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সচেতনতার মাধ্যমে বসতবাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি পালন ও মাছ চাষের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা,পুষ্টি চাহিদা পূরণ, বাড়তি আয়ের জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং স্থানীয় যুব ক্লাবকে শক্তিশালীকরণ করার মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করতে মুরগীর খামার ও মাছ চাষের প্রজেক্টের মাধ্যমে আয় ও তাদের কর্মমুখী করতে কাজ করে যাচ্ছে।