প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন-জীবিকায় ‘হেলপ কক্সবাজার’ এর প্রচেষ্টা!

কক্সবাজার জার্নাল রিপোর্ট •

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন সাধনের জন্য হেলপ কক্সবাজার নিরলসভাবে কাজ করছে।

অস্ট্রেলিয়ান এইডের অর্থায়নে ব্রাকের সহযোগিতার জালিয়াপালং ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরির লক্ষে কাজ করছে উখিয়ার এই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি।

প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি উপকারভোগীরা কর্মসংস্থানের জন্য ছাগল ও মুরগী নিচ্ছেন!

তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন ও মানসিক বিকাশ তথা সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে হতদরিদ্র ৩০টি পরিবারের মাঝে জীবন ও জীবিকার জন্য সেলাই কাজ, মুরগী ও ছাগল পালনের কাজ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যা শারীরিকভাবে অক্ষম, পক্ষঘাতগ্রস্ত, পঙ্গু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

নতুন সেলাই মেশিন পেয়ে খুশিতে আত্মহারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শিউলী

অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক সেলাই মেশিন ও কাপড় পেয়ে স্বাবলম্বীর পথে শিউলি আক্তার। অথচ অভাবের সংসার এবং নানান বৈষম্য, দারিদ্রতা নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। হেলপ কক্সবাজারকে পাশে পেয়ে নিজের জড়তা কাটিয়ে এক পায়ে মেশিন চালিয়ে তৈরি করছেন কাপড়। যা বিক্রি করে আয় করছেন এবং অভাবের সংসারে সহায়ক হয়েছেন।

অন্যদিকে, আবদুল হাফিজ একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। চোখে কিছু না দেখলেও সে হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক মুরগী ও সহায়ক উপকরণ পেয়ে লাভবান হয়েছেন। ডিম ওবাচ্চা থেকে মুরগী বড় করে বিক্রি পূণরায় মুরগী কিনেছেন এবং তা পরিচর্যা করছেন। এখন আসতে আসতে বাড়ছে তার মুরগীর সংখ্যা বড় হচ্ছে তার ছোট খামার। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে তিনিও অবদান রাখছেন।

বয়োবৃদ্ধ মকবুল আহমেদ। যিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। একসময় সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু একদিন কাজ করতে গিয়ে বিল্ডিং এর ছাদ থেকে পড়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। পরবর্তীতে হেলপ কক্সবাজারের জরিপে নাম উঠে আসে তার। পেয়েছেন তার পছন্দনুযায়ী ছাগল পালন।

তিনি জানান, হেলপ কক্সবাজারের সহযোগিতায় পাওয়া ছাগল পালন করছি। ছাগল বাচ্চা দিবে খুব দ্রুত। বাচ্চা হলে তা পরিচর্যা করে বড় করবো এবং ছাগল বিক্রি করে লাভের টাকাসহ পূণরায় আরও বেশী ছাগল কিনে খামার করবো।

এমনই লাইভলিহুড প্রকল্পের আওতায় সহায়তা পেয়েছেন আরও ২৭টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবার। যারা নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন। সফল হতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেমের জানান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে হেলপ কক্সবাজারের বিভিন্ন কার্যক্রম তাদের মাঝে আশার আলো দেখাচ্ছে। এ সংস্থা জালিয়াপালংয়ের পাইন্যাশিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধীদের মাঝে এ আশাবাদ প্রতিষ্ঠা করছে যে তারা কোনমতেই সমাজের বোঝা নয়- বরং উপযুক্ত সুবিধা এবং সুযোগ পেলে তারা ও সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারে তাদের সক্ষমতা এবং একইসাথে দেশকে পারে এগিয়ে নিতে। “হেলপ কক্সবাজার সংস্থা”র একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে শুধু প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন নয়, বরং তারা প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকদের জীবনমান উন্নয়নে এবং একইসাথে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেও কাজ করছে। এটি একইসাথে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী কিন্তু খুবই কার্যকরী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

তিনি বলেন, সাধারণত যাঁরা শারীরিকভাবে একটু অক্ষম, তাঁদের নিয়ে আমরা তেমন একটা চিন্তা করি না। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো আমরা অনেক সময় খেয়াল করি না। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও সমাজে সবার মতো সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা স্বাভাবিক মানুষের মতো অথবা অনেক সময় স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বেশি দক্ষ হয়ে থাকেন। তাঁদের যথাযথ সুযোগ তৈরি করে দিলে তাঁরা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারেন।

প্রতিবন্ধীদের সাথে কথা বলছেন হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক

সেজন্য সবার আগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবন্ধীদের জন্য নেওয়া সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের ওপর আরোপিত বাঁধা, কুসংস্কার ও নেতিবাচক ধ্যানধারণা দূরীকরণে আমরা সচেষ্ট। তাদের ক্ষমতায়নে সরকার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসাসহ নানা ধরনের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। মানবসম্পদ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের মেধা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের উন্নয়নের মূলধারায় আনতে আমরা সচেষ্ট। আর তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থান অত্যন্ত জরুরি। কারণ, একটি পরিবারে যখন একজন প্রতিবন্ধী জন্ম নেয়, তখন সেই পরিবার ধরেই নেয় যে সে পরিবারের জন্য একটি বোঝা। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে আমাদের আর পরিবারের বোঝা হিসেবে বেঁচে থাকতে হবে না। তাদের মূলস্রোতধারায় আনতে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধী বলে এই সমাজে কেউ নিজেকে আর অসহায় ভাবতে পারবে না। একজন অটিজম আক্রান্ত শিশুর মা-বাবা তার সন্তানের জন্য মুখ লুকাবে না। প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থান ঘটবে।’

‘বাংলাদেশ বর্তমানে গোটা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। দেশের সব ক্ষেত্রেই এখন সফলতা দৃশ্যমান। এই উন্নয়নের জোয়ারে দেশের এক শ্রেণির মানুষ অবহেলিত থাকবে, পেছনে পড়ে থাকবে, তা হতে পারে না। প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মহীনতা দেশের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ জন্য আমরা জালিয়াপালং ইউনিয়নের কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।

হেলপ কক্সবাজার এর সহায়তায় মাছ চাষে স্বপ্ন বুনছেন পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদ!

নিজস্ব প্রতিবেদক •

কক্সবাজারের উখিয়ার হাঙ্গরঘোনা গ্রামে মাছ চাষ করে দারিদ্র্যমুক্তি ও নিজেদের সাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখছেন পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্যরা।

স্থানীয় যুব ক্লাবকে স্বাবলম্বী ও শক্তিশালীকরণের লক্ষে উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজারের সহযোগিতায় মাছ চাষের একটি প্রকল্প দেওয়া হয় পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদ সদস্যদের।

তারই ধারাবাহিকতায় তিন মাস আগে থেকে এক কানি জায়গার পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক তাদেরকে বিভিন্ন জাতের পোনা এবং মাছের খাবার সরবরাহ করা হয়। এতে তারা পুকুরটি সংস্কার করে মাছ ছাড়েন এবং সঠিকভাবে মাছের খাবার দেন। নিয়মিত পরিচর্যার ফলে অল্প সময়ে মাছ বড় হতে শুরু করেছে এবং মাছ অপুষ্টিতে বা রোগাক্রান্ত হয়নি।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন তাদের মৎস্য খামার পরিদর্শনে যান হেলপ কক্সবাজার এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম। এসময় তারা পুকুরে মাছের খাবার দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং পুকুরে মাছের খাবার দিতেই রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, পাঙাশ, টেংড়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ খাবার খেতে ছুটে আসে। পরে জাল মেরে দেখা যায়, মাছের সাইজ খুব দ্রুত বড় হচ্ছে এবং আর মাসদেড়েক পরিচর্যা শেষে বাজারে বিক্রি করা যাবে। এতে ভালো লাভবান হবে বলে আশাবাদী তারা।

পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুবেল বড়ুয়া বলেন, হেলপ কক্সবাজার এর সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ এবং মাছ চাষের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংগঠনের সদস্যরাও খুব খুশি এবং উদ্যোগী হয়েছে। তাই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত কোন রকমের সমস্যা দেখা দেয়নি এমনকি এ পর্যন্ত একটি মাছও মারা যায়নি। মাছের বৃদ্ধিও ঠিক আছে। আশা করছি মাছের বয়স সাড়ে তিন থেকে চার মাস হলে বিক্রি শুরু করব এবং একটু পরিশ্রম করে মাছ চাষ করতে পারলে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব বলে জানান তিনি।

পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা বলেন, হেলপ কক্সবাজার’র মাধ্যমে মাছ চাষের প্রকল্প পেয়ে আমাদের সংগঠনের সদস্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। উন্নত জীবনের স্বপ্ন এখন তাদের চোখে। উৎপাদনমুখী কাজের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা এখন আর বোঝা নয়, সম্পদ।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, মাছ চাষে নিজেদের মেধা, অভিজ্ঞতা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে মাছ বিক্রি করে প্রকল্প আরও বৃদ্ধি করা হবে এবং লাভের অংশ থেকে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করবো এবং অসহায়দের পাশে দাঁড়াবো।

পরিদর্শন শেষে হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় আমরা একটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন সহ ৪টি স্থানীয় সংগঠনকে প্রশিক্ষণ শেষে সহযোগিতার মাধ্যমে উপার্জনের পথ তৈরি করেছি। উক্ত প্রকল্পে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, হতদরিদ্র ও এতিম পরিবারের সন্তান এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তারা নিজেদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারবে এবং এলাকার উন্নয়নে নিজেরাই এগিয়ে আসতে পারবে।

এসময় তিনি কাজের অগ্রগতি, স্থায়ীত্বশীলতা, ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ও সংগঠনের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেন।

পরিশেষে পাতাবাড়ি শৈলরডেবা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান এইড, ব্র‍্যাক এবং হেলপ কক্সবাজার এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ান এইডের অর্থায়নে ব্র‍্যাকের কারিগরি সহযোগিতায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য মানবিক সহায়তা প্রকল্প জালিয়াপালং ও রাজাপালং ইউনিয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রকল্পসমূহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি, স্থানীয়করণ, নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার মাধ্যমে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সচেতনতার মাধ্যমে বসতবাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি পালন ও মাছ চাষের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা,পুষ্টি চাহিদা পূরণ, বাড়তি আয়ের জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং স্থানীয় যুব ক্লাবকে শক্তিশালীকরণ করার মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করতে মুরগীর খামার ও মাছ চাষের প্রজেক্টের মাধ্যমে আয় ও তাদের কর্মমুখী করতে কাজ করে যাচ্ছে।

ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা দিচ্ছে ‘হেলপ কক্সবাজার’: নির্বাহী পরিচালকের পরিদর্শন

উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার এর সহায়তায় উখিয়া ও রামু উপজেলায় স্বাবলম্বী ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এসডিপি প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে স্কুল ঝরে পড়া একশো যুবক-যুবতী।

০৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সরেজমিনে উক্ত প্রকল্পের কার্যক্রমের ২০টি ট্রেড পরিদর্শন করেন হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম।

এসময় তিনি কম্পিউটার, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং এবং ট্রেইলারিং ট্রেডের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের উৎসাহিত করেন।

পরিদর্শন শেষে স্কুল ঝরে পড়া ও অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান, যারা মাধ্যমিক শিক্ষাচক্রে অংশগ্রহণ করতে পারেনি তাদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেওয়াতে এসডিসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ সকল ছেলেমেয়েরা যেন বেকার না থাকে এবং নিজের কর্মসংস্থান নিজেই করতে পারে এই সুযোগ তৈরী করে দেওয়ার জন্য এসডিসিকে ধন্যবাদ। এই অদক্ষ ও বেকার জনগোষ্ঠিকে দক্ষ সম্পদে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই।

তাই ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন শিক্ষায় দ্বিতীয় সুযোগ প্রদান করা একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্কুল ঝরে পড়া ও যারা সাধারণ শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত না তারা যাতে নিজেকে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সেই প্রচেষ্টা করা হবে এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে। কেউ যাতে বেকার ঘরে বসে না থাকে, ঘরের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন উপার্জনমুখী পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন হেলপ কক্সবাজার এর নির্বাহী পরিচালক।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়া তারুণ্যের একটি বড় অংশ বেকার থাকলেও, ভারতীয়, শ্রীলঙ্কাসহ বিদেশি কর্মীরা কাজ করছেন। কেননা, কাজের জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন, বাংলাদেশি তরুণদের অনেকের মাঝে তা নেই। তাই চাহিদানুযায়ী দক্ষ কর্মী হতে এ প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

সুতরাং এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আধুনিক বিশ্বে, বৈজ্ঞানিক যুগে, দক্ষতানির্ভর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই ঝরে পড়তে হয়, কিংবা কাঙ্ক্ষিত সাফল্যবঞ্চিত হতে হয় সঠিক দক্ষতার অভাবে। তাই ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও এ সত্য উপলব্ধি করে মেনে নিতে হবে যে, বর্তমান সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাজারে দক্ষতা ছাড়া কোনোভাবেই টিকে থাকা যাবে না।

সর্বমহল যদি একই সাথে দক্ষতার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে নিতে পারে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি দেশেও গড়ে উঠবে দক্ষ জনশক্তি, ফলে ঘুচে যাবে বেকারত্বের অভিশাপ।

তিনি প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ প্রকল্পের ১৪ থেকে ১৮ বয়সের স্কুল ঝড়ে পড়া ছেলে মেয়ে কারিগরি শিক্ষার আওতায় এনে তাদের জন্য উপার্জনের পথ তৈরি করা হচ্ছে। উক্ত প্রকল্পে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, হতদরিদ্র ও এতিম পরিবারের সন্তান এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ভাতা এবং শিক্ষা প্রদানের জন্যও ভাতা রাখা হয়েছে। ছয় মাস প্রশিক্ষণের পর তাদের চাকুরীর ব্যবস্থা করা হবে। যাতে তারা বিনামূল্যে এ প্রশিক্ষণ নিয়ে পরবর্তীতে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারে।

এসময় তিনি কাজের অগ্রগতি, স্থায়ীত্বশীলতা, ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ও প্রকল্পের প্রশিক্ষণার্থীদের বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেন।

নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন যাতে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এবং প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন দক্ষ হয়ে ওঠে।

উক্ত প্রকল্পের প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানান, হেলপ কক্সবাজার’র সহযোগীতায় এসডিসি প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিতে পেরে তারা খুবই খুশি। তারা দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় এ প্রকল্প না থাকলে হয়তো টাকার অভাবে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে পারতোনা। কিন্তু এখন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত জীবনের স্বপ্ন এখন তাদের চোখে। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নে আমরা আর বোঝা হয়ে থাকবো না এবং প্রতিযোগিতার বর্তমান যুগে নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে ভাগ্যোন্নয়নের চেষ্টা করবেন বলে জানান তারা। তাই তারা সুইজারল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এসডিসি), ব্র‍্যাক এবং হেলপ কক্সবাজার এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

মাঠ পর্যায়ের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে হেলপ কক্সবাজার’র এসডিসি প্রকল্পের ফোকাল পার্সন মোঃ সাদেকুল ইসলাম, প্রোগ্রাম অর্গানাইজার মোঃ মঈনুল ইসলাম মুবিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সুইজারল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এসডিসি)র অর্থায়নে ব্রাকের কারিগরি সহযোগিতা এবং হেলপ কক্সবাজার এর বাস্তবায়নে স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম(এসডিসি) প্রকল্প উখিয়া এবং রামু উপজেলায় কাজ করে যাচ্ছে।

প্রকল্পসমূহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি, স্থানীয়করণ, নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসা এবং তাদের সচেতনতার বৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষকর্মী হিসেবে গড়ে তুলে তাদের কর্মমুখী করা।