প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন-জীবিকায় ‘হেলপ কক্সবাজার’ এর প্রচেষ্টা!

কক্সবাজার জার্নাল রিপোর্ট •

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন সাধনের জন্য হেলপ কক্সবাজার নিরলসভাবে কাজ করছে।

অস্ট্রেলিয়ান এইডের অর্থায়নে ব্রাকের সহযোগিতার জালিয়াপালং ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরির লক্ষে কাজ করছে উখিয়ার এই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি।

প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি উপকারভোগীরা কর্মসংস্থানের জন্য ছাগল ও মুরগী নিচ্ছেন!

তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন ও মানসিক বিকাশ তথা সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে হতদরিদ্র ৩০টি পরিবারের মাঝে জীবন ও জীবিকার জন্য সেলাই কাজ, মুরগী ও ছাগল পালনের কাজ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যা শারীরিকভাবে অক্ষম, পক্ষঘাতগ্রস্ত, পঙ্গু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

নতুন সেলাই মেশিন পেয়ে খুশিতে আত্মহারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শিউলী

অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক সেলাই মেশিন ও কাপড় পেয়ে স্বাবলম্বীর পথে শিউলি আক্তার। অথচ অভাবের সংসার এবং নানান বৈষম্য, দারিদ্রতা নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। হেলপ কক্সবাজারকে পাশে পেয়ে নিজের জড়তা কাটিয়ে এক পায়ে মেশিন চালিয়ে তৈরি করছেন কাপড়। যা বিক্রি করে আয় করছেন এবং অভাবের সংসারে সহায়ক হয়েছেন।

অন্যদিকে, আবদুল হাফিজ একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। চোখে কিছু না দেখলেও সে হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক মুরগী ও সহায়ক উপকরণ পেয়ে লাভবান হয়েছেন। ডিম ওবাচ্চা থেকে মুরগী বড় করে বিক্রি পূণরায় মুরগী কিনেছেন এবং তা পরিচর্যা করছেন। এখন আসতে আসতে বাড়ছে তার মুরগীর সংখ্যা বড় হচ্ছে তার ছোট খামার। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে তিনিও অবদান রাখছেন।

বয়োবৃদ্ধ মকবুল আহমেদ। যিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। একসময় সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু একদিন কাজ করতে গিয়ে বিল্ডিং এর ছাদ থেকে পড়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। পরবর্তীতে হেলপ কক্সবাজারের জরিপে নাম উঠে আসে তার। পেয়েছেন তার পছন্দনুযায়ী ছাগল পালন।

তিনি জানান, হেলপ কক্সবাজারের সহযোগিতায় পাওয়া ছাগল পালন করছি। ছাগল বাচ্চা দিবে খুব দ্রুত। বাচ্চা হলে তা পরিচর্যা করে বড় করবো এবং ছাগল বিক্রি করে লাভের টাকাসহ পূণরায় আরও বেশী ছাগল কিনে খামার করবো।

এমনই লাইভলিহুড প্রকল্পের আওতায় সহায়তা পেয়েছেন আরও ২৭টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবার। যারা নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন। সফল হতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেমের জানান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে হেলপ কক্সবাজারের বিভিন্ন কার্যক্রম তাদের মাঝে আশার আলো দেখাচ্ছে। এ সংস্থা জালিয়াপালংয়ের পাইন্যাশিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধীদের মাঝে এ আশাবাদ প্রতিষ্ঠা করছে যে তারা কোনমতেই সমাজের বোঝা নয়- বরং উপযুক্ত সুবিধা এবং সুযোগ পেলে তারা ও সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারে তাদের সক্ষমতা এবং একইসাথে দেশকে পারে এগিয়ে নিতে। “হেলপ কক্সবাজার সংস্থা”র একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে শুধু প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন নয়, বরং তারা প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকদের জীবনমান উন্নয়নে এবং একইসাথে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেও কাজ করছে। এটি একইসাথে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী কিন্তু খুবই কার্যকরী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

তিনি বলেন, সাধারণত যাঁরা শারীরিকভাবে একটু অক্ষম, তাঁদের নিয়ে আমরা তেমন একটা চিন্তা করি না। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো আমরা অনেক সময় খেয়াল করি না। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও সমাজে সবার মতো সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা স্বাভাবিক মানুষের মতো অথবা অনেক সময় স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বেশি দক্ষ হয়ে থাকেন। তাঁদের যথাযথ সুযোগ তৈরি করে দিলে তাঁরা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারেন।

প্রতিবন্ধীদের সাথে কথা বলছেন হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক

সেজন্য সবার আগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবন্ধীদের জন্য নেওয়া সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের ওপর আরোপিত বাঁধা, কুসংস্কার ও নেতিবাচক ধ্যানধারণা দূরীকরণে আমরা সচেষ্ট। তাদের ক্ষমতায়নে সরকার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসাসহ নানা ধরনের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। মানবসম্পদ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের মেধা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের উন্নয়নের মূলধারায় আনতে আমরা সচেষ্ট। আর তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থান অত্যন্ত জরুরি। কারণ, একটি পরিবারে যখন একজন প্রতিবন্ধী জন্ম নেয়, তখন সেই পরিবার ধরেই নেয় যে সে পরিবারের জন্য একটি বোঝা। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে আমাদের আর পরিবারের বোঝা হিসেবে বেঁচে থাকতে হবে না। তাদের মূলস্রোতধারায় আনতে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধী বলে এই সমাজে কেউ নিজেকে আর অসহায় ভাবতে পারবে না। একজন অটিজম আক্রান্ত শিশুর মা-বাবা তার সন্তানের জন্য মুখ লুকাবে না। প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থান ঘটবে।’

‘বাংলাদেশ বর্তমানে গোটা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। দেশের সব ক্ষেত্রেই এখন সফলতা দৃশ্যমান। এই উন্নয়নের জোয়ারে দেশের এক শ্রেণির মানুষ অবহেলিত থাকবে, পেছনে পড়ে থাকবে, তা হতে পারে না। প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মহীনতা দেশের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ জন্য আমরা জালিয়াপালং ইউনিয়নের কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।