বিশ্ব শরনার্থী দিবস উপলক্ষে হেলপ কক্সবাজার’র আলোচনা সভা

২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস আজ। বিশ্বের দেশে দেশ ছড়িয়ে থাকা শরনার্থীদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।

তারই ধারাবাহিকতায় দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে ‘আমরা একসঙ্গে কষ্ট উপশম করি, শিখি এবং জীবনকে দীপ্তিময় করি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংস্থার নিবার্হী পরিচালক আবুল কাশেম’র সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, সংস্থার সকল স্তরের সহকর্মী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।

উক্ত আলোচনা সভায় আলোচকবৃন্দরা বলেন, প্রায় চার বছর আগ প্রাণ বাঁচাত সাড় সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদশে আশ্রয় নযে়। বাংলাদশেরে সঙ্গ প্রত্যাবাসন চুক্তি করলেও রাখাইনের পরিবেশেের উন্নতি মিয়ানমার কোনো পদক্ষপে নেইনি।

তার ফলে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় নিজেদের আদি নিবাসে ফেরত যেতে রাজি হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনরে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হলেও রোহিঙ্গাদের একজন কেও রাখাইন ফেরত পাঠানো যায়নি।

আমরা আমাদের ছোট পরিসর থেকে সরকার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ইউএন এজেন্সিসহ সাংবাদিক সমাজকে বিশেষভাবে অনুরোধ করব, অতীতের চেয়ে আরো জোরালো ও কার্যকরি ভুমিকা রাখতে, যাতে করে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির একটি সম্মানজনক প্রত্যাবাসনকে আশু নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

এসময় আলোচকবৃন্দ আরো বলেন, বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষরে সংখ্যা আট কোটি ২৪ লাখ এবং শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে থাকা মানুষের ৭০ শতাংশের উৎস পাঁচ দেশে।

এই পাঁচ দেশের মধ্যে সিরিয়া থেকে ৬৮ লাখ, ভেনেজুয়েলা থেকে ৪৯ লাখ, আফগানিস্তান থেকে ২৮ লাখ, দক্ষিণ সুদান থেকে ২২ লাখ এবং মিয়ানমার থেকে ১১ লাখ মানুষ বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন। এই হিসাব ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সভ্যতার এ পর্যায়ে এসেও নারী-শিশু সহ কোটি-কোটি মানুষ হত্যা,নিপীড়ন, পাশবিক নির্যাতন সহ প্রচন্ড অমানবিক আচরনের শিকার হয়ে জন্মভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হবে , এটি মানব সভ্যতার জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর।

তাই এই কলংক মোচনের জন্য বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে প্রকৃত অর্থে দায়িত্বশীল ভুমিকায় নিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো মানবিক ও সোচ্চার ভুমিকা রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়।

পরিবেশ-প্রকৃতি সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক

আবদুল্লাহ আল আজিজ •

বক্তব্য রাখছেন হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গিকার’। প্রতিপাদ্যের গুরুত্ব এবং পরিবেশের তাৎপর্য নিয়ে উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে অনুুষ্ঠিত হয় “বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২১” শীর্ষক এক আলোচনা সভা।

হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ম্যানেজার শাকিল আহমদ, ম্যানেজার অপারেশন এন্ড কমিউনিকেশন কেএম মহসিনউজ্জামান, প্রজেক্ট ম্যানেজার জিল্লুর রহমান, সিভেক প্রজেক্ট ম্যানেজার সাদেকুল ইসলাম, মনিটরিং অফিসার মধু বড়ুয়া, এডমিন এন্ড ফাইন্যান্স অফিসার মোঃ ইউসুফ, এইচ আর অফিসার তারেক মাহমুদুল, মোঃ মুবিন, মোঃ মোশাররফ, ফিল্ড অফিসার সাইফুল ইসলাম, মাএখিন রাখাইন, তাজনোভা রিয়া সানি, প্রদত্ত বড়ুয়া, সিডিও জেসমিন আক্তার প্রমুখ।

এসময় হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম বলেছেন, কক্সবাজারের পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। অধিক গাছপালা কাটার ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কক্সবাজার জেলায় প্রায় ২৪ লাখ মানুষের পাশাপাশি উখিয়া টেকনাফে ১০ লক্ষের ও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপ রয়েছে। যার ফলে কক্সবাজারে পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। তাছাড়া রোহিঙ্গা আসার ফলে উখিয়া এবং টেকনাফের মোট ১৭৬ হেক্টর আবাদি জমি দখল হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১০ লক্ষ জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের মানবসৃষ্ট ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারনে মোট ৯৩ হেক্টর জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চাষের অযোগ্য জমি গুলোকে চাষযোগ্য করে তুলতে জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে প্রতিদিন টন টন প্লাষ্টিকের বর্জ্য যুক্ত হচ্ছে। বর্ষার সময় এসব বর্জ্য গিয়ে মিশছে সাগরে, নদীতে এবং মাটিতে। প্লাষ্টিক বর্জ্যরে কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে, নদী হারাচ্ছে নাব্যতা। এছাড়া রোহিঙ্গা প্রতিদিন তৈরি করছে টন টন প্লাস্টিক বর্জ্য যা স্থানীয় পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে।

মানুষের টিকে থাকার জন্য এই পৃথিবী দরকার, কিন্তু পৃথিবীর টিকে থাকার জন্য মানুষের দরকার নাই। পৃথিবীতে বহু প্রাণী এসেছে, বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু পৃথিবী টিকে আছে। মানুষও যদি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর কিছু যায় আসে না। যেভাবে আমরা পরিবেশ প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি প্রকারান্তরে আমরা আমাদের অস্তিত্বকেই ধ্বংস করছি, এটিই হচ্ছে বাস্তব সত্য। সুতরাং আমাদের নিজের প্রয়োজনেই পরিবেশ-প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করতে হবে।

উক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, ইটভাটা, তামাক চাষ, ময়লা আবর্জনা পুড়ানো, রাস্তায় রাস্তায় ময়লা আবর্জনা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে কক্সবাজারে বায়ু দূষণের প্রভাব বেশি। এছাড়া পাহাড় কাটা, গাছ কাটা, নদী ভরাট, সমুদ্র সৈকত দখল, জীববৈচিত্য ধ্বংস, প্যারাবন কাটাসহ নানাকারনে দেশে সবচেয়ে বেশি পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার। এ অবস্থা থেকে রেহায় পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ পরিবেশবাদীদের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে।

বক্তারা বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণে শিশুদের মেধা ও বুদ্ধিমত্তা হ্রাসের পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় শিশু মৃত্যুর হার, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তারা আরও বলেন, পৃথিবী ও মানব জাতির বিপর্যয়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। এবিষয়ে সংশ্লিষ্টরা আশু পদক্ষেপ না নিলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যেই মানুষ মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।