পরিবেশ-প্রকৃতি সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক

আবদুল্লাহ আল আজিজ •

বক্তব্য রাখছেন হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গিকার’। প্রতিপাদ্যের গুরুত্ব এবং পরিবেশের তাৎপর্য নিয়ে উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে অনুুষ্ঠিত হয় “বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২১” শীর্ষক এক আলোচনা সভা।

হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ম্যানেজার শাকিল আহমদ, ম্যানেজার অপারেশন এন্ড কমিউনিকেশন কেএম মহসিনউজ্জামান, প্রজেক্ট ম্যানেজার জিল্লুর রহমান, সিভেক প্রজেক্ট ম্যানেজার সাদেকুল ইসলাম, মনিটরিং অফিসার মধু বড়ুয়া, এডমিন এন্ড ফাইন্যান্স অফিসার মোঃ ইউসুফ, এইচ আর অফিসার তারেক মাহমুদুল, মোঃ মুবিন, মোঃ মোশাররফ, ফিল্ড অফিসার সাইফুল ইসলাম, মাএখিন রাখাইন, তাজনোভা রিয়া সানি, প্রদত্ত বড়ুয়া, সিডিও জেসমিন আক্তার প্রমুখ।

এসময় হেলপ কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম বলেছেন, কক্সবাজারের পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। অধিক গাছপালা কাটার ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কক্সবাজার জেলায় প্রায় ২৪ লাখ মানুষের পাশাপাশি উখিয়া টেকনাফে ১০ লক্ষের ও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপ রয়েছে। যার ফলে কক্সবাজারে পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। তাছাড়া রোহিঙ্গা আসার ফলে উখিয়া এবং টেকনাফের মোট ১৭৬ হেক্টর আবাদি জমি দখল হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১০ লক্ষ জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের মানবসৃষ্ট ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারনে মোট ৯৩ হেক্টর জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চাষের অযোগ্য জমি গুলোকে চাষযোগ্য করে তুলতে জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে প্রতিদিন টন টন প্লাষ্টিকের বর্জ্য যুক্ত হচ্ছে। বর্ষার সময় এসব বর্জ্য গিয়ে মিশছে সাগরে, নদীতে এবং মাটিতে। প্লাষ্টিক বর্জ্যরে কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে, নদী হারাচ্ছে নাব্যতা। এছাড়া রোহিঙ্গা প্রতিদিন তৈরি করছে টন টন প্লাস্টিক বর্জ্য যা স্থানীয় পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে।

মানুষের টিকে থাকার জন্য এই পৃথিবী দরকার, কিন্তু পৃথিবীর টিকে থাকার জন্য মানুষের দরকার নাই। পৃথিবীতে বহু প্রাণী এসেছে, বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু পৃথিবী টিকে আছে। মানুষও যদি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর কিছু যায় আসে না। যেভাবে আমরা পরিবেশ প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি প্রকারান্তরে আমরা আমাদের অস্তিত্বকেই ধ্বংস করছি, এটিই হচ্ছে বাস্তব সত্য। সুতরাং আমাদের নিজের প্রয়োজনেই পরিবেশ-প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করতে হবে।

উক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, ইটভাটা, তামাক চাষ, ময়লা আবর্জনা পুড়ানো, রাস্তায় রাস্তায় ময়লা আবর্জনা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে কক্সবাজারে বায়ু দূষণের প্রভাব বেশি। এছাড়া পাহাড় কাটা, গাছ কাটা, নদী ভরাট, সমুদ্র সৈকত দখল, জীববৈচিত্য ধ্বংস, প্যারাবন কাটাসহ নানাকারনে দেশে সবচেয়ে বেশি পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার। এ অবস্থা থেকে রেহায় পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ পরিবেশবাদীদের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে।

বক্তারা বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণে শিশুদের মেধা ও বুদ্ধিমত্তা হ্রাসের পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় শিশু মৃত্যুর হার, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তারা আরও বলেন, পৃথিবী ও মানব জাতির বিপর্যয়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। এবিষয়ে সংশ্লিষ্টরা আশু পদক্ষেপ না নিলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যেই মানুষ মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।