হেলপ কক্সবাজার এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি দিবসে র‍্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার এর আয়োজনে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “ কোভিড-১৯ পরবর্তী অন্তর্ভূক্তিমূলক বিশ্ব গড়তে প্রয়োজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ’।

এ উপলক্ষে শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) সকালে জালিয়াপালং এ র‍্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ডিজাবিলিটি লার্নিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের সভাপতি শামশুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জালিয়াপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের বলেন, প্রতিবন্ধীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সম্পদে পরিণত হয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, হেলপ কক্সবাজার এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম, জালিয়াপালং ১নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মোঃ হোসাইন সিকদার, পাইন্যাশিয়া কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ কালু, হেলপ কক্সবাজার এর প্রজেক্ট ম্যানেজার লরেন্স দাজেল, মনিটরিং এন্ড লাইভলিহুড অফিসার মধু বড়ুয়া, ফিল্ড অফিসার, সাইফুল ইসলাম, ফাতেমা বেগম।

বক্তারা বলেন, সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা মানব বৈচিত্রেরই অংশ। তাই, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তাদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি। সমাজের অবিচ্ছেদ্য এ অংশকে সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তবেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।”

প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সবাইকে এক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদেরকেও মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

উক্ত অনুষ্টানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং জালিয়াপালং ইউনিয়নের শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন

কন্যাশিশুর বিকাশে পরিবার থেকেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে

আবদুল্লাহ আল আজিজ •

কক্সবাজারের উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার এর উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় “ডিজিটাল প্রজন্ম, আমাদের প্রজন্ম” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালিত হয়েছে।

এ উপলক্ষে ১১ অক্টোবর (সোমবার) হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের অফিস হলরুমে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত আলোচনা সভায় হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহবুব কাউসারের সঞ্চালনায় কোরআন তেলাওয়াত করেন সংগঠনের এডমিন মোঃ রিদুয়ান।

সংগঠনের উপদেষ্টা সানা উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন হেলপ কক্সবাজার এর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ম্যানেজার শাকিল আহমদ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, হেলপ কক্সবাজার এর সিনিয়র অপারেশন এন্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজার কেএম মহসিনুজ্জামান, প্রজেক্ট ম্যানেজার ইকবাল হোসাইন, মনিটরিং ইভ্যালুয়েশন এন্ড লাইভলিহুড অফিসার মধু বড়ুয়া, ফিল্ড অফিসার তাজনুভা রিয়া সানি, সাইফুল ইসলাম, হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মোঃ হোসাইন, অনুর্ধ্ব-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের তারকা খেলোয়াড় সাহেদা আক্তার রিফা প্রমুখ।

কন্যা শিশুর সুরক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, আজকের কন্যা শিশু আগামী দিনের নারী এবং মা। তাই কন্যা শিশুদের সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কন্যারা এখনও কিছু কিছু জায়গায় পিছিয়ে আছে। তাই এই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আমরা সবাইকে সচেতন করে তুলতে চাই। কন্যা শিশু শুধু কন্যা নয়, সে এক সময় মা হবে। সেই মা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এগিয়ে নেবে। তাই কন্যাদের যত্ন নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যত্ন নেওয়া হয়। তিনি বলেন, কন্যা শিশুদের নির্যাতন বন্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা সানা উল্লাহ বলেন, কন্যা শিশুদের প্রথম বৈষম্য শুরু হয় পরিবার থেকে। তাদের অবহেলা করা হলেও বৃদ্ধ বয়সে সেই কন্যাদেরই মা-বাবার বেশি সেবা করতে দেখা যায়।

তিনি বলেন, এখন সবক্ষেত্রেই এগিয়ে আমাদের কন্যারা। এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্ট তার বড় প্রমাণ। খেলাধুলায়ও এখন কন্যারা অনেক ভালো করছে। ক্রিকেট, ফুটবলে তাদের নাম ছড়াচ্ছে। তার মধ্যে আমাদের গর্ব অনুর্ধ্ব ১৬ দলের তারকা খেলোয়াড় রিফা অন্যতম।

তিনি আরও বলেন, মেয়েরা যতো এগিয়ে যাবে, শিক্ষিত হবে সমাজ ততো এগিয়ে যাবে। তাই কন্যা শিশুদের সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহবুব কাউসার বলেন, যেকোনো কল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য নারী-পুরুষের অবদান অনস্বীকার্য। শুধুমাত্র পুরুষরাই সব সৃষ্টির সাথে জড়িত নয়, নারীদের সুযোগ দিলে তারাও সবকিছু জয় করতে পারে। তারাও পুরুষের মতো সমাজকে আলোকিত করতে পারে। সেজন্য সব শিশুদেরই সমভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার দিতে হবে। বর্তমান সময়ে পরিবার ছাড়াও সামাজিকভাবে অনেক নারী নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে।

বাল্যবিবাহ নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানতম অন্তরায় এবং আমাদের সমাজ কন্যা শিশুদেরকে বোঝা মনে করে। কন্যা শিশুদের পড়াশোনার পেছনে টাকা খরচ করতে চায় না। তারা মনে করে বিয়ে দিতে পারলে বোঝা দূর হয়ে গেল। তবে সময় অনেক বদলেছে। কন্যা শিশুরা এখন আর বোঝা নয়। বরং কন্যা শিশুরা হল সর্বোত্তম বিনিয়োগ ও সমাজের আলোকবর্তিকা।

হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের নারী এডমিন ফাতেমা তানজিন তার বক্তব্যে বলেন, লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই বাবা মায়ের বেশি যত্ন নেয়। আসলে কন্যা শিশুদের সুশিক্ষিত করার জন্য যদি ভালো বিনিয়োগ করা যায় তবে সেই একদিন বড় হয়ে আদর্শ ও মহিয়ষী মায়ে পরিণত হয়। গাছকে যেমন ভালো পরিচর্যা করলে সে গাছ বড় হয়ে ফুল, ফল, কাঠ, ছায়া ও নির্মল পরিবেশ উপহার দেয়, ঠিক তেমনিভাবে একটি কন্যা শিশুর পেছনে বিনিয়োগ করলে পরিণত বয়সে সে একজন আলোকিত মায়ে পরিণত হয় এবং সে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নানাভাবে আলোকিত করে।

হেলপ কক্সবাজার এর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ম্যানেজার শাকিল আহমদ বলেন, কন্যা শিশু ও নারীকে অবজ্ঞা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের মধ্যে রেখে কখনোই একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে উঠতে পারে না। এই বাস্তবতায়, নারী ও কন্যা শিশুর শিক্ষার বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। সেটি শুরু করতে হবে কন্যা শিশুর জন্য সর্বোচ্চ বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে। পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে তাদের জন্য সমসুযোগ ও সমঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। আর এই মানবসম্পদ গড়ার প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে কন্যা শিশুর জন্মলগ্ন থেকেই। মনে রাখতে হবে, আজকের কন্যা শিশু আগামী দিনের একজন সুশিক্ষিত মহিয়সী নারী ও আদর্শ মা এবং সেই আলোকবর্তিকা হিসেবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করবে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে জাতিসংঘ কন্যা শিশু দিবসের ঘোষণা দেয়। ২০১২ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৪ সালে প্রথম শিশু আইন প্রণয়ন করেন। এর ১৫ বছর পরে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ঘোষণা দেয়। এর পরের বছর বাংলাদেশ সেই সনদে সই করে।